দৈনিক সান্তাহার

মুক্তিযোদ্ধা লতিফ রাষ্ট্রীয় ভাতা বঞ্চিত

Santahar Freedom fighter

সাগর খান, প্রধান প্রতিবেদক :: দেশরক্ষা যুদ্ধে জয়ী হলেও জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সান্তাহার পৌর শহরের ইয়ার্ড কলোনীর মহল্লার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও রাষ্ট্রীয় ভাতা থেকে বঞ্চিত। সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
জানা যায়, ৩০ বৎসর বয়সে দেশ রক্ষার টানে এবং পাক বাহিনীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। মুক্তিযুদ্ধের আগে তিনি কৃষি কাজ করতেন। ১৯৭১ সালের মে মাসে ভারতে প্রবেশ করে ৫০০ সদস্য নিয়ে নৌ-সেনা কমান্ড গঠন করে তার মধ্যে তিনি এক সদস্য। ভারতের শিলিগুড়ি ক্যাম্পে ১৫ দিনের মত আর কলকাতায় পলাশী নৌ কমান্ড বাহিনীর সাথে ১ মাস ৫ দিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। নৌ-পথের যুদ্ধের বিভিন্ন কৌশল, রাইফেল, স্টেনগান, এলএমজি, এসএমজি, গ্রেনেড ও বোমা তৈরীর উপর প্রশিক্ষণ নেয়। তার এফ এফ নম্বর-০৩৯১। প্রশিক্ষণ শেষে নৌ-সেনা কমান্ড বাহিনীর একটি দল বাংলাদেশে প্রবেশ করে সরাসরি ৭নং সেক্টরে কমান্ডার মেজর জেনারেল কাজী নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে তিনি নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলা সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নদী পথে যুদ্ধ করেছেন। এই দলে তার সাথে ছিলেন তার উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল, কাশেম, ওমর সহ অন্যান্যরা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ জানায়, স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও কোন ভাতা বা রাষ্ট্রীয় কোন সুযোগ সুবিধা পাননি। মুক্তিযুদ্ধের পর রংপুর মেলেটারি ক্যাম্পে পুলিশের চাকরির জন্য ট্রেনিং নিয়েছিল। কিন্তু তার চাকরি হয়নি। তবে তিনি রংপুর পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে ভারতীয় সার্টিফিকেট জমা দিয়ে বাংলাদেশি মুক্তিযুদ্ধের সেনাপতি কর্ণেল ওসমানীর স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নেয়। সেই মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট জিয়া সরকার ক্ষমতা আসার পর নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খোকন যাচাই-বাছাই করা জন্য তার কাছে থেকে জমা নেয়। প্রায় ১ মাস অতিবাহিত হলে খোকনের কাছে আমি আমার সার্টিফিকেট ফেরত চাইলে তিনি আমাকে বলেন, কে বা কাহারা আমাদের মুক্তিযোদ্ধা অফিসের আলমারী আগুনে পুড়ে দিয়েছে। এরপর আমি ডিমলা থানায় একটি জিডি করি কিন্তু কোন লাভ হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সেই সার্টিফিকেটের জন্য অনেক চেষ্টা তদবির করেছেন, অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। বর্তমান সরকার অনলাইনে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপার দরখাস্ত আহবান করলে তিনি এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন। তিনি আশাবাদী একদিন তিনি কাঙ্খিত ফল পাবেন। ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম আছে বলে তিনি দাবি করেন। এছাড়া তিনি ডিমলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ভোটে একবার ভোটও দিয়েছিলেন। বর্তমান তিনি একজন রাইস মিলের চাতালের নাইট গার্ড।
মুক্তিযুদ্ধের স্মরণীয় কোন ঘটনার কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি জানালেন নদী পথে বুকে বোমা নিয়ে অনেক পাক বাহিনীর সাথে তাদের এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছে এবং সেই যুদ্ধে উল্লা সাহেব ও নজরুল ইসলাম নামে দুইজন মুক্তিযোদ্ধা মারাত্মক আহত হওয়ার কথা জানালেন। আব্দুল লতিফ আরোও জানান তার ৪ ছেলে ৮ মেয়ে নাতী, নাতনী নিয়ে কোন দিনে এক বেলা আবার কোন দিন দুই বেলা খেয়ে অতিকষ্টে জীবনযাপন করছে। সারাদিন ধর্মীয় কাজে ব্যস্ত থাকেন আর রাতে নাইট গার্ডের কাজ করে কোন রকমে সংসার চালিয়ে যাচ্ছে। খুবই সাধারণ জীবন যাপন করেন তিনি।
এখন আপনার কি চাওয়া জাতির কাছে-এ কথা জিজ্ঞেস করতেই এক গাল হেসে বললেন দেশের সব রাজাকারের ফাঁসি দেখে মরতে চাই। আর বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যা করছেন তাতে তিনি খুশি এবং তিনি আশাবাদী বর্তমান সরকার তার রাষ্ট্রীয় ভাতার ব্যবস্থা করে দেবে। তিনি আরোও বলেন দেশটা ভাল থাকুক। দেশের মানুষ ভাল থাকুক। বর্তমান সরকার প্রকৃত সকল মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় ভাতার ব্যবস্থা করে দেবে এটাই তার চাওয়া পাওয়া।
এ ব্যাপারে ডিমলা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তইবুল ইসলাম বলেন, আব্দুল লতিফ একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। আমরা এক সঙ্গে ভারতে শিলিগুড়ি ও কলকাতার পলাশী নৌ কমান্ড বাহিনীর প্রশিক্ষন নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধ করি। আমি বর্তমান সরকারের কাছে আব্দুল লতিফের রাষ্ট্রীয় ভাতার ব্যবস্থা করার জোর দাবী জানায়।
সান্তাহার ডটকম/সাগর খান/৩১ জুলাই ২০১৬ইং