বিবিধ

রাণীনগরে ভুয়া তালাকনামায় সংসার পুড়ল প্রবাসী নারীর

সান্তাহার ডেস্ক :: নওগাঁর রাণীনগরে এক কাজির বিরুদ্ধে প্রবাসী নারীর স্বাক্ষর জালিয়াতি করে স্বামীর কাছে ভুয়া তালাকনামা পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। এতে ওই নারীর সাজানো সংসার তছনছ হয়ে গেছে। এ ঘটনা পুরো জেলায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে দায় এড়াতে ওই তালাক ভুয়া ও জাল বলে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন চতুর কাজি।

জানা গেছে, রাণীনগরের কাচারি বেলঘড়িয়া গ্রামের দিনমজুর আজিজুল কাজীর মেয়ে রাহিমা বিবির সঙ্গে ১৪ বছর আগে রঞ্জনিয়া গ্রামের মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডলের ছেলে মো. মোতালেব মণ্ডলের বিয়ে হয়। এ দম্পতির ঘরে ৯ বছরের একটি ছেলে আছে। অর্থনৈতিক সচ্ছলতার আশায় ছয় বছর আগে জর্ডানে যান রাহিমা বিবি। এরপর তার পাঠানো টাকায় জমি কেনাসহ সংসারের ঋণ পরিশোধ করেন স্বামী মোতালেব। ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল প্রবাসী রাহিমা বিবির স্বাক্ষর জাল করে নওগাঁ নোটারি পাবলিক কার্যালয় থেকে তার স্বামীকে তালাকের জন্য এফিডেভিট করেন কথিত কাজি বেলাল হোসেন। একইদিন তালাকের নোটিশ মোতালেব ও রাহিমার বাবার বাড়িতে পাঠান।

মেয়ে প্রবাসে থেকে কীভাবে স্বামীকে তালাক দিতে পারেন? এ ঘটনায় হতভম্ব হয়ে পড়ে রাহিমার পরিবার। বিষয়টি জানাজানি হলে নিজেকে বাঁচাতে ৯ আগস্ট ওই তালাকনামা ভুয়া দাবি করে নিজের স্বাক্ষর ও সিল মোহরযুক্ত একটি প্রত্যয়ন নিজেই রাহিমার মায়ের কাছে পাঠান কথিত কাজি বেলাল হোসেন।

প্রত্যয়ন পত্রে লেখা- এই তালাক আমার অফিসে হয় নাই বা তালাক করে নাই ইহা সত্য। যদি কেউ তালাকের কাগজ দেখিয়া থাকে বা কেউ তৈরি করিয়া থাকে তাহা জাল ও ভুয়া এবং মোছা: রাহিমার ক্ষতি সাধনের জন্য করিয়াছে। যাহা উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

রাহিমার মা আফরোজা বিবি বলেন, আমরা এসব কাগজপত্র সম্পর্কে তেমন কিছুই বুঝি না। রাহিমা বলেছে স্বামীকে তালাক দেয় নাই। তাহলে কাজি বেলাল কীভাবে তালাকের কাগজ তৈরি করল? এই ভুয়া কাগজের জন্যই আমার মেয়ের নিজ হাতে গড়ে তোলা কষ্টের সংসার ভেঙে তছনছ হয়ে গেল। আমার জামাই এই কাগজের ভিত্তিতে আবার বিয়ে করলে মেয়ের পাঠানো টাকায় কেনা জমির ভাগাভাগি করার জন্য থানায় একটি অভিযোগ দেই। পরে সেটা নিয়ে আলোচনার সময় বেরিয়ে আসে ভুয়া তালাকের কাহিনী। কাজি বেলালের কারণেই আমার মেয়ের সংসার নষ্ট হয়ে গেছে। আমি কাজিসহ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি চাই।

মোতালেব মণ্ডল বলেন, মাঝখানে রাহিমার সঙ্গে আমার একটু মনমালিন্য চলছিল। কিছুদিন পর কাজি বেলাল নিজে আমার বাড়িতে এসে তালাকের কাগজপত্র দিয়ে যায়। পরে বেলালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে বলে তালাকের তিন মাস পার হয়ে গেছে, এখন বিয়ে করতে পারবো। তাই আমি আরেকটি বিয়ে করেছি।

কথিত কাজি মো. বেলাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তালাকের নোটিশ ফরম ও প্রত্যয়ন-পত্রে আমি স্বাক্ষর কিংবা সিল দেইনি।

উপজেলা মুসলিম পারিবারিক ও নিকাহ রেজিস্টার এবং কাজী সমিতির সভাপতি এ.টি.এম রেজাউল করিম বলেন, আমাদের কাছে থাকা সরকারি বইয়ে মো. বেলাল হোসেন নামে তালিকাভুক্ত কোনো কাজি নেই। কাজি না হয়েও বেলাল দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বিয়ে ও তালাক করিয়েছেন। শুধু রাণীনগরই নয়, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলায় বয়স বৃদ্ধি করে বাল্যবিয়ে, দেনমোহর জালিয়াতি, মিথ্যে তালাক দেয়াসহ ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। তার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে শত শত মানুষ। তার এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কাজি সমিতির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

নওগাঁ জজ আদালতের আইনজীবী আব্দুল বারী বলেন, এফিডেভিটের মাধ্যমে তালাক হয় না। সরকার বিদেশে অবস্থান করে তালাক দেয়াকে বৈধতা দেয়নি। এসব ভুয়া কাজের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে। গত বছর বাল্যবিয়ে ও দেনমোহর জালিয়াতির মামলায় কথিত কাজি বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে নওগাঁ পিবিআই। ওই মামলা এখনো বিচারাধীন।

সান্তাহার ডটকম/২৫ আগস্ট ২০২০ইং/এমএম