দৈনিক সান্তাহার

সান্তাহার স্টেশনে বাবুল গানওয়ালা

সান্তাহার স্টেশনে বাবুল গানওয়ালা

তরিকুল ইসলাম জেন্টু :: গায়ে লাল পাঞ্জাবি আর মুখে বাহারি রং মেখে প্রতিদিনই বাড়ি থেকে বের হন বাবুল হোসেন বাবু। জীবিকার তাগিদে প্রায় ছুটে আসেন সান্তাহার রেলওয়ে জংশন স্টেশনে। সেখানে ট্রেনযাত্রীদের গান শুনিয়ে আনন্দ দিয়ে কিছু পয়সা পেলেই তিনি খুশি। বাহারি সাজের এই মানুষটি গান শোনানোর সময় চোখে মুখে আনন্দ থাকলেও বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই তার বুকরে ভেতরে এক সাগর কষ্ট।

পৃথিবীতে আপন বলতে জন্মদাতা মা ও দুই মেয়ে ছাড়া বাবুলের আর কেউ নেই। জীবন সঙ্গিনী স্ত্রীকে হারিয়েছেন অনেক আগেই। তাইতো সংসার চলাতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে গান আর গল্প শুনান তিনি। বাহারি পোশাকের এই মানুষটি হারমোনিয়াম কাঁধে নিয়ে জীবিকার তাগিদে ছুটে বেড়ান সান্তাহারসহ বিভিন্ন স্থানে।

গান শেষে খাবার খেয়ে পথের ধারে, রেলস্টেশন কিংবা বাস টার্মিনালে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। অকালে স্ত্রীকে হারানোর বেদনা অন্যদিকে সংসারে দারিদ্রতা। সবমিলে নিজের বুকে হাজারো কষ্ট চেপে রেখে অন্যদের গান শুনিয়ে আনন্দ দেয়া সত্যিই অনেক কষ্টের কাজ। আর এমন কষ্টের কাজ প্রায় ১২ বছর ধরে করে আসছেন সান্তাহার পার্শ্ববর্তী নওগাঁ সদর উপজেলার ভিমপুর গ্রামের বাবুল হোসেন বাবু। এলাকায় সবাই তাকে বাবু গায়েন বলেই চেনেন। শুধু সান্তাহার রেলস্টেশনেই নয় জীবিকার তাগিদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে গান করেন বাবু গায়েন।

বাবুল হোসেন বাবু বলেন, আগে গ্রামে গ্রামে যাত্রাপালায় গান অভিনয় করতাম। এখন আর যাত্রাপালার দিন নাই। তাই ১২ বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় গান করে বেড়াই। বয়সের কারণে কাজ করতে পারিনা এজন্য কেউ কাজে নেই না। ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছি। স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। সেই ছোট বেলা থেকেই সংসার আমাকে চালাতে হয়েছে। বিয়ের সাত বছরের মাথায় তিনটি মেয়ে হয় আমাদের। কী কপাল আমার! বড় মেয়ে ৪ বছর, মেঝো মেয়ে ২ বছর আর ছোট মেয়ের বয়স যখন ৬ মাস তখন আমার স্ত্রীও মারা যায়। খুব কষ্টে আমি আর আমার মা মিলে দুটি মেয়েকে বড় করেছি। প্রতিদিন গান করে যে টাকা উপার্জন হয় দিন শেষে সেই টাকা দিয়ে মেয়ের জন্য দুধ কিনে বাড়িতে যেতাম। যেদিন টাকা কম উপার্জন হত সেদিন আর দুধ কেনার পর চাল ও বাজার সদায় করতে পারতাম না। গান করে যে টাকা উপার্জন হয় তা থেকে একটু একটু করে কিছু টাকা জমিয়ে বড় দুটি মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। এখন আর একটি মেয়ে আছে ১২ বছর বয়স।

তিনি আরো বলেন, সান্তাহার, নওগাঁ, নাটোর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, রাজশাহী, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে গান করি। মানুষ আমার গান শুনে যে টাকা দেয় তাতেই আমার সংসার চলে। প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। আবার কোনো দিন ২০০ টাকাও উপার্জন হয়। দুই মেয়েকে বিয়ে দেয়ার সময় লোন নিয়েছিলাম। এখন প্রতিমাসে তার কিস্তি দিতে হয়। সংসারের অভাবের কারণে আমি পড়ালেখা করতে পারি নাই। আমার মেয়েদেরও পড়ালেখা করাতে পারিনি। বাবুলের গান শুনে মুগ্ধ হয় সান্তাহার স্টেশন থেকে বিভিন্নস্থানে যাওয়া জন্য অপেক্ষারত ট্রেন যাত্রীরা। খুশি হয়ে যে যেমন পারে টাকা দেয়। এভাবেই চলছে বাবুলের জীবন সংগ্রাম।

সান্তাহার ডটকম/ইএন/২৬ জুন ২০১৯ইং