দৈনিক সান্তাহার

দিন দিন বড় হচ্ছে পোনার বাজার

Santahar fishসান্তাহার ডেস্ক:: জলাশয়ের সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজার। হ্যাচারি রয়েছে ৬০টি। জলাশয় আর হ্যাচারি থেকে প্রতি মাসে রেণু উৎপাদন হচ্ছে ৫ থেকে ৬ হাজার কেজি এবং পোনা উৎপাদন হয় ৫ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদিত পোনা ও রেণু প্রতিদিন গড়ে বিক্রি হয় ১৪ লাখ টাকারও বেশি। নীরবে সান্তাহারসহ আদমদীঘিতে রেণু ও পোনা উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে। এতে দেশে মাছের ঘাটতি পূরণে যেমন ভূমিকা রেখে যাচ্ছে তেমনি সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থানের। বিভিন্ন অঞ্চলের মাছ চাষিরা আদমদীঘির পোনাবাজারে ভিড় করে পোনা সংগ্রহের জন্য। পোনা উৎপাদন এখন আয়ের প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে উপজেলাবাসীর।
জানা যায়, আদমদীঘি উপজেলা ও সান্তাহার পৌরসভাতে স্বাধীনতার পরেও এ উপজেলায় জমি চাষ ছিল একমাত্র কাজ। এর পরিবর্তন করে দিয়েছে মাছ চাষ। আদমদীঘির মাঝিপাড়া গ্রামের মন্মথ চন্দ্র সরকার ছোট যমুনা নদী থেকে রেণু ও পোনা সংগ্রহ করে স্থানীয় পুকুর মালিকদের কাছে বিক্রি শুরু করেন। মূলধন ও প্রযুক্তির অনগ্রসরতায় মন্থর গতি ছিল শুরুতে।
১৯৮৫ সালে মন্মথ কৃত্রিম পদ্ধতিতে রেণু উৎপাদনের লক্ষে হ্যাচারি নির্মাণ করেন। দাবি করা হয়, উপজেলায় রেণু উৎপাদন ছিল সেটাই প্রথম। এরপর যত দিন গড়িয়েছে ততই রেণু ও পোনা উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে। এখন প্রায় ৮০-৮৫ শতাংশ মানুষ মাছ চাষের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। উপজেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে পুকুর বা জলাশয়ের সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজার। হ্যাচারি রয়েছে ৬০টি। পুকুরে পোনার চাষ করা হচ্ছে। হ্যাচারিতে কৃত্রিমভাবে ডিম থেকে রেণু উৎপাদন করা হয়। হ্যাচারি থেকে রেণু উৎপাদন হয় ৫-৬ হাজার কেজি। পাঁচ-ছয় দিন বয়সী রেণু থেকে পোনা উৎপাদন হয় প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন। জলাশয়গুলোয় রেণু থেকে পোনা বিক্রি করা হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাছ চাষিদের কাছে। পুঁটি, কাতলা, দেশি শিং, মাগুর, পাবদা, তেলাপিয়া, রুই, পাঙ্গাশ, কার্প, কমন কার্প, মৃগেল মাছের পোনা জাত ও মান ভেদে ১০০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। পোনা বিক্রির জন্য উপজেলা সদরের পাবলিক লাইব্রেরি সংলগ্ন মাঠে বাজার তৈরি হয়েছে। এ বাজার বসে প্রতিদিন ভোর থেকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পোনা বিক্রির হাটও শেষ হয়ে যায়।
মৎস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত আদমদীঘি উপজেলায় এখন পোনা মাছের বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। দিনাজপুর, রংপুর, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, সিলেটসহ ঢাকার আশপাশের বেশকিছু অঞ্চলের মাছ চাষিরা পোনা সংগ্রহ করেন এ বাজার থেকে। প্রতিদিন এ বাজারে লাখ লাখ টাকার মাছের পোনা বেচাকেনা হয়। নওগাঁর মাছ চাষি আলম জানান, আদমদীঘির উৎপাদিত মাছের পোনা সাধারণত চাষে দ্রুত বাড়ে।
নতুন পুকুরে চাষাবাদ করা হলেও পানির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে। আদমদীঘি উপজেলা ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, এ সমিতি গঠিত হয়েছে ১৯৯০ সালে। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত মাছের পোনা বেচাকেনার বাজার বসে। প্রতিদিন ১২-১৪ লাখ টাকার পোনা বেচাকেনা হয়।
পোনা উৎপাদনকারী শফিকুল ইসলাম জানান, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, মিঠাপুকুর, নীলফামারী, নওগাঁ, রাজশাহী, বগুড়া, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলার মাছ চাষিরা তার হ্যাচারি থেকে বিভিন্ন প্রকার রেণু-পোনা সংগ্রহ করে। আদমদীঘি উপজেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাদল মৈত্র জানান, সমিতির সঙ্গে উৎপাদনমুখী ৪৮টি হ্যাচারি রয়েছে। এসব হ্যাচারিতে মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পোনা উৎপাদন ও বিক্রি করা হয়। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের। বগুড়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা খিরোদকুমার পাল জানান, জেলায় মৎস্য হ্যাচারির সংখ্যা ৯৮টি। এর মধ্যে আদমদীঘি উপজেলায় সিংহভাগ হ্যাচারি রয়েছে। এখানকার রেণু থেকে পোনা খুব সহজে অন্যান্য পুকুরে বেড়ে ওঠে।

>> সান্তাহার ডটকম/ইএন/৬ এপ্রিল ২০১৭ইং