সান্তাহারের বাহিরে

নওগাঁয় একের পর এক বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

 

সান্তাহার ডেস্ক ::  নওগাঁয় একের পর এক বেড়িবাঁধ ভেঙে জেলার মান্দা, আত্রাই ও রানীনগর উপজেলার অন্তত ১৫টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের বিপুলসংখ্যক মানুষ এখন পানিবন্দি। উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই মারাত্বক আকার ধারণ করছে।

বৃহস্পতিবার সকালে আত্রাই উপজেলায় আত্রাই নদীর জাতআমরুল, বৈঠাখালী, পাঁচুপুর ও একই নদীর মান্দা উপজেলার পার-নরুল্লাহবাদ এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আত্রাই নদীর পানি কিছুটা কমলেও বৃহস্পতিবার বিকেলে বিপদসীমার প্রায় ১২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

এদিকে বাঁধ ভেঙে যাবার ফলে আত্রাই-সিংড়া, আত্রাই-বান্দাইখাড়া ও মান্দা–বান্দাইখাড়া সড়কে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া নওগাঁ-আত্রাই সড়ক ও আত্রাই-সিংড়া সড়কে ভারি যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ।

গত কয়েক দিন থেকে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি ও বৃষ্টির পানিতে জেলার আত্রাই, ছোট যমুনা ও ফকিন্নী নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। বুধবার রাতে আত্রাই ও ফকিন্নী নদী মান্দা উপজেলার চকরামপুর, দাসপাড়া ও জোকাহাট পয়েন্টে তিনটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও ৭টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার নুরুল্লাহবাদ, কসব, বিষ্ণপুর ও তেতুলিয়া ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে মান্দায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যায়।

এদিন আত্রাই উপজেলার তিনটি পয়েন্টে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধঁ ও ভরতেঁতুলিয়া ও মধুগুড়নই গ্রামের বেড়ি বাঁধ ভেঙে যায়। এতে আত্রাই উপজেলায় নতুন করে কালিকাপুর ইউনিয়নের গন্ডগোহালী, ধনেশ্বর, বাজেধনেশ্বর, গোয়ালবাড়িয়া, আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের সিংসাড়া, দীঘা, দমদমা, ব্রজপুর, পাঁচুপুর ইউনিয়নের মধুগুড়নই, পাঁচুপুর, বাকিওলমা, কাঁন্দওলমা, বিশা ইউনিয়নের বৈঠাখালী, পারমোহনঘোষ, বিশা, থলওলমাসহ অর্ধশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকে পরিবার নিয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে।

উপজেলার জগদাস গ্রামের রহিমা খাতুন বলেন, আমাদের গ্রামসহ পাশ্ববর্তী চকবিষ্টুপরের প্রায় অর্ধশত ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে। আমরা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। এখন পর্যন্ত সরকারি কোন ত্রাণ পাইনি।

আত্রাই উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নভেন্দু নারায়ন চৌধুরী বলেন, পানিবন্দি প্রায় ১ হাজার ৮০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ হিসেবে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারও পানিবন্দি মানুষের মাঝে ত্রাণ হিসেবে শুকনো খাবার চিড়া, মুড়ি, গুড়, খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হয়েছে।

আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে এম কাউছার হোসেন বলেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে উপজেলার কয়েক স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় ২ হাজার ৫৭ হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে কৃষক অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে সময়মত সংস্কার না করায় একের পর এক বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে বলে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষেরা অভিযোগ করেন।

এব্যাপারে নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান খান বলেন, উজানের ঢলের পানির চাপ বেশি থাকায় ও প্রচণ্ড স্রোতের কারণে চেষ্টার পরও বাধঁ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। বর্তমানে আত্রাই নদী বিপদসীমার ১২৪ সেন্টিমিটার ও ছোট যমুনা বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিযে প্রবাহিত হচ্ছে।

সান্তাহার ডটকম/ ১৬ জুলাই ২০২০ইং /এমএম