বিবিধ

ব্যতিক্রম যুবক মাহফুজুর রহমান

ব্যতিক্রম যুবক মাহফুজুর রহমান

তরিকুল ইসলাম জেন্টু :: ব্যতিক্রম এক যুবকের নাম মাহফুজুর রহমান। বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম বুড়িদহ। গত চার বছর ২০১৬ সাল থেকে ‘প্রথমআলো’ সহ স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকা সংরক্ষণ করছেন। তিনি ছাত্র জীবন থেকে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন।

মান্দা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে আত্রাই নদীর তীরে প্রত্যন্ত গ্রাম বুড়িদহ। বাজারের রাস্তা সংলগ্ন বাড়ির দরজার পাশে ডেক্স (টেবিল) করে সেখানে পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থা করেছেন। সেই ডেক্সে প্রতিদিন স্থান পায় প্রথমআলো, করতোয়া, চাকরির পত্রিকাসহ কয়েকটি পত্রিকা। এতে করে প্রতিমাসে প্রায় হাজার টাকার মতো ব্যয় হয় পত্রিকার পেছনে।

বর্তমানে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে যেখানে সবাই ঝুঁকে পড়েছেন। সেই সময়ে মাহফুজুর রহমান স্বেচ্ছায় উদ্যোগ নিয়ে জ্ঞানের আলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থা করেছেন। এ যেন এক অন্য রকম অনুভূতি।

ব্যতিক্রম যুবক মাহফুজুর রহমান

মাহফুজুর রহমান ২০১১ সালে এসএসসি, ২০১৩ সালে এইচএসসি এবং ২০১৮ সালে নর্থ বেঙ্গল ইন্টার-ন্যাশনাল ইউনিভারসিটি থেকে এলএলবি (সম্মান) পাশ করেছেন। বতর্মানে তিনি নওগাঁ আদালতে শিক্ষানবিশ হিসেবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। দাম্পত্য জীবনে তিন বছর বয়সের একটি ছেলে সন্তান আছে। স্ত্রী শাফি মাস্টার্সে পড়াশোনা করছেন।

২০১১ সালে বুড়িদহ বাজারে একজন দোকানদার নিয়মিত পত্রিকা নিত। সেখানে প্রবীন ব্যক্তিরা পত্রিকা পড়ত। হঠাৎ করেই ওই দোকানি পত্রিকা নেয়া বন্ধ করে দেন। কারণ পত্রিকার জন্য দোকানিকে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হতো। আর গ্রামের মানুষের পক্ষে জাতীয় পত্রিকার পেছনে মাসে সাড়ে ৩শ টাকা ব্যয় করাটাও কষ্টকর।

যেহেতু পড়াশোনার জন্য মাহফুজুর রহমান রাজশাহীতে ম্যাসে (ছাত্রাবাস) থাকতেন। বছরে কয়েকবার বাড়িতে আসতেন। একবার বাড়িতে এসে বাজারের ওই দোকানে পত্রিকা পড়তে গেলে আর পত্রিকা নেয়া হয় না বলে জানতে পারেন। এরপর ২০১৬ সালে নিজেই পত্রিকা নেয়া শুরু করেন এবং সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেন।

শুধু পত্রিকা সংরক্ষণকারীই নয়। তিনি বুড়িদহ বাজারে ‘জান্নাত সাফি বার্ড’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় গড়তে গাছে গাছে কলস বেঁধে দিয়েছেন। কেউ যেন পাখি শিকার না করে সে বিষয়ে মানুষদের সচেতন করেন। এ ছাড়াও, জনসাধারনের সুবিধার জন্য নারী ও শিশু নির্যাতনে সহায়তা, ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্যবিষয়, আইন ও সালিস কেন্দ্র, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবি সমিতি, ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার, শ্রমিকদের সহায়তা, অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন, পুলিশ প্রশাসন সহ বিভিন্ন দপ্তরের জরুরি মোবাইল ও টেলিফোন নাম্বার দিয়ে ব্যানার সাটিয়েছেন। তিনি নিজেকে যুক্ত রেখেছেন সামাজিক কর্মকান্ডে।

স্থানীয় আবু হায়াত গোল্ডেন বলেন, মাহফুজুর রহমান আমাদের ছোট ভাই। এ গ্রামটি প্রত্যন্ত হওয়ায় এখানে পত্রিকা সহজে আসেনা এবং মানুষ পড়তে পারে না। এ ছাড়াও, গ্রামের মানুষ টাকা দিয়ে পত্রিকা কিনে পড়ার অভ্যাসও নাই। জনসাধারনের সুবিধার্থে ব্যক্তি উদ্যোগে এ কাজ টি করেছে। এটি নিঃসন্দেহ একটি ভাল কাজ। এমন উদ্যোগ আমার মাথায় থেকেও আসেনি।

স্থানীয় আরেক যুবক মিজানুর রহমান বলেন, যেহেতু নিজ খরচে এখানে পত্রিকা রাখা হচ্ছে। আর মাহফুজুর রহমান পড়াশোনা শেষ করে এখনও কোন আয়ের উৎস তৈরি হয়নি। যদি পত্রিকার প্রতিষ্ঠানগুলো সৌজন্য হিসেবে ফ্রিতে এখানে পত্রিকা সরবরাহ করতেন তাহলে তার খরচটা অন্তত সাশ্রয় হতো। আমরা প্রত্যন্ত এই গ্রামের মানুষরাও পড়তে পারতাম।

উদ্যোগী যুবক মাহফুজুর রহমান বলেন, বতর্মান সময়ে ইন্টারনেট আর ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু গ্রামের মানুষদের সবার তো আর স্মার্ট ফোন নাই। যে ইন্টারনেট থেকেই পত্রিকা পড়বে। এ জন্য নিজ থেকে খরচ করেই পত্রিকা সংরক্ষণ করছি। মনের প্রশান্তির জন্য পত্রিকা পড়ি। এলাকার সবাই পড়তে ও জানতে পারে এজন্য সহযোগীতা করি। আমার মতো অনেক যুবক আছেন যারা দু’তিন বছর আগের পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপন খুঁজতে আসেন। সংরক্ষনে রাখা পত্রিকা বের করে দেখাতে সহযোগীত করা হয়। যেহেতু এখনও আমার কোন আয়ের উৎস তৈরি হয়নি। আমার পেশা থেকে যদি ভবিষ্যতে আয় আসে সমাজের জন্য আরো কিছু করার পরিকল্পনা আছে।

এ ছাড়াও, পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় গড়তে গাছে গাছে কলস বেঁধে দেয়া হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টির সময় পাখিরা যেন নিরাপদে থাকতে পারে।

সান্তাহার ডটকম/ইএন/২৬ জুন ২০১৯ইং