দৈনিক সান্তাহার

রাণীনগরে অলৌকিকভাবে উঠে দাঁড়াল বটগাছ

রাণীনগরে অলৌকিকভাবে উঠে দাঁড়াল বটগাছ

তরিকুল ইসলাম জেন্টু :: অনেকের কাছে মনে হতে পারে বিষয়টি আষাঢ়ে গল্প। কিন্তু এলাকার লোকের দাবি ঘটনা সত্য। আর এ ঘটনাটিই এখন একজনের মুখ থেকে আরেকজনের মুখে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। সৃষ্টি করছে জনমনে নানা কৌতূহলের। ঘটনাটি নওগাঁর রাণীনগরে ঝড়ে উপড়ে পড়া একটি বটগাছ পুনরায় অলৌকিকভাবে দাঁড়িয়ে গেছে। দিনে গাছটি কাটার সময় হঠাৎ করেই এমন ঘটনাটি ঘটেছে রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউপির যাত্রাপুর গ্রামে। আর এ ঘটনার পর থেকে প্রতিদিনই বটগাছটি দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন উৎসুক জনতা।

ওই গ্রামের যদু প্রামাণিক ছোটবেলা থেকেই জ্বিন বা মাদারের প্রতি আসক্ত ছিলেন। মাঝে মধ্যেই তার উপর ভর করত জ্বিন বা মাদার। প্রায় অর্ধশত বছর আগে মাদারে ভর করা অবস্থায় যদু প্রামাণিক ছোট একটি বট গাছ নিয়ে এসে রোপন করেন। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলে মাদারের গাছ হিসেবে পরিচিতি পায় বটগাছটি। জ্বিন বা মাদারের স্মরণে প্রতি বছর সেখানে মাদারের পালা গানের আসরও বসে। এ ছাড়াও, দূর দূরান্তরের লোকজন নানা রোগ বালায়ে আক্রান্ত ব্যাধি দূর করতে ওই গাছে মানত করত। অনেকের দাবি এ গাছে মানত করে অনেক লোকজন রোগ থেকে মুক্তিও পেয়েছে।

গত মাসে সারাদেশে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে গাছটি উপড়ে পার্শ্বে একটি পাকা ভবনের উপর পড়ে। এতে ওই ভবনের সিঁড়ি রুম এবং ছাদের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু গাছটি উপড়ে গেলেও মাদারের ভয়ে কেউ ডাল পালা পর্যন্ত কাটতে সাহস পায়নি। ফলে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গাছটি ওই অবস্থায় পড়ে থাকে। এরপর রোজার মাত্র একদিন আগে গাছ কাটা লেবার নিয়ে এসে গাছের ডাল পালা কাটতে থাকে। গাছের মাথার অংশ কাটার সময় হঠাৎ করেই গাছটি অবিশ্বাস্যভাবে অবিকল আগের মতো দাঁড়িয়ে যায়।

রাণীনগরে অলৌকিকভাবে উঠে দাঁড়াল বটগাছরাণীনগরে অলৌকিকভাবে উঠে দাঁড়াল বটগাছ

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পড়ে থাকা গাছের উপর একজন লেবার দাঁড়িয়ে কাজ করছিল। কিন্তু গাছ দাঁড়িয়ে গেলেও লোকটি গাছ থেকে পড়েও যায়নি এমনকি তার এতটুকু ক্ষতিও হয়নি। ঘটনা জানাজানি হবার পর থেকেই প্রতিদিনই উৎসক জনতা ছুটে আসছেন গাছটি এক নজর দেখার জন্য। তবে অনেকে মনে করছেন, গাছটি উপড়ে যাবার সময় ডাল পালার কারণে মাথার অংশ অনেক ভারী ছিল। সেগুলো কেটে দিলে গোরার অংশ ভারী হওয়ায় গাছটি হয়তো দাঁড়িয়ে গেছে। তবে একদম আগের মতো অবিকল দাঁড়িয়ে যাওয়া, গাছের শিকর, গোড়ালি মিলে যাওয়াটাও অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন তারা।

গাছের পাশের বাড়ির সুফিয়া বেওয়া জানান, বিয়ের পর থেকে তিনি এ গাছ দেখছেন, গাছের পার্শ্বে টয়লেট ছিল তাদের। রাত-বিরাত পর্যন্ত সেখানে চলা চল করলেও কোনো আলামত দেখতে পাননি তারা। তবে সেখানে লোকজন মানত করতো, প্রতিবছর মাদারের পালা গান বসে বলে জানান তিনি। ওই গ্রামের বৃদ্ধ হেকমত আলী জানান,গাছটি অবিকল দাঁড়িয়ে যাওয়াটা একদম অস্বাভাবিক এবং অলৌকিক। গাছের তদারককারী ও মাদারের পালা গানের আয়োজক সুরজান বেওয়া ও পুটি বেওয়া জানান, ওই গাছে মাদার বাস করে। প্রতি বছরই গাছের নিচে মাদার স্মরণে পালা গান করতে হয় ,না করলে অনেক সমস্যা হয়। তারা যুক্তি দিয়ে বলেন, একশত জন লোক এসে গাছটি খাড়া করতে পারবে না। যদিও পারে তাহলে অবিকল দাঁড়িয়ে রাখার ক্ষমতা নেই। তাদের পূর্ণ বিশ্বাস, গাছটি মাদারই দাঁড় করে রেখেছে ।

সান্তাহার ডটকম/ইএন/১০ জুন ২০১৯ইং