গুণীজন

১৯৭১ এর স্মৃতি; আমার বাবার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। শেষ পর্ব

ইঞ্জিনিয়ার এস, এম রায়হানুল ইসলাম রায়হান :: (গত পর্বের পর) ১৪ ডিসেম্বর আমরা নওগাঁ শহরে প্রবেশ করি শহর দখল এবং জলিল ভাইকে নিয়ে আমরা নওগাঁ শহরে বিজয় মিছিল করি। পরে আমরা তখনকার এসডিও সাহেবের কাছে আমাদের অস্ত্রগুলো জমা দেই। জলিল ভাই আমাদের কয়েকজনকে উপহার হিসাবে বন্দুক দেই আমরা বন্দুক লাইসেন্স করে থানা থেকে বন্দুক এন্ট্রি করে বাড়িতে চলে আসি। আবার ৯ জানুয়ারিতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই। কারণ বঙ্গবন্ধুর ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের সময় উপস্থিত ছিলাম। পরদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ক্যাম্প বসে ঐখানে গিয়ে আমি রিপোর্ট করি এবং আমায় ডকুমেন্টগুলো রেখে চলে যেতে বলে, আমি বাড়িতে চলে আসি। ঐসময় আমার টাইফয়েট হয় আমি ডা. হুদা এর মেডিকাল রিপোর্ট পাঠায়ে দেই। পরে ব্যবসাতে জড়িয়ে পরাতে আর চাকরি করা হয়নি ও বেসামরিক হয়ে থেকে যাই। পরে জলিল ভাইয়ের দেয়ার সাটিফিকেট ও অস্ত্র জমা দেয়া রশিদ দেখায়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে যোগ দিই। তারপর সনদ পাই, সনদ নং ৪০৯৫৮ এবং সামরিক সনদ নং ৮৬৭২৫ ও মুক্তবার্তা নং ০৩০৫০১০১৭০ এবং জাতীয় তালিকা গ্রেজেট নং ৭৫৪ ও ভোটার নং ৬২৭ বেসামরিক হিসাবে মুক্তিযোদ্ধা আছি।

যুদ্ধ চলাকালীন প্রচন্ড শীত পরছিল তখন আমরা পাঁচ যোদ্ধা মিলে আব্দুল জলিল ভাইয়ের বাসায় বালুঘাট গিয়েছিলাম কিছু কম্বলের জন্য। কম্বল নিয়ে আসার পরে আমরা পাঁচজন মিলে বালুঘাট সুজিত বুড়িমা ষ্টুডিওতে ঐ ছবিটা তুলছিলাম। ছবিতে বামদিক থেকে-
১. মোঃ সাইফুল ইসলাম (গ্রাম- জাফরপুর, আক্কেলপুর)
২. মৃতঃ আব্দুস সাত্তার (নাটোর সদর)
৩. মৃতঃ খলিলুর রহমান (গ্রাম-বলরামপুর, আক্কেলপুর)
৪. মোঃ মোজাম্মেল হক (রাণীনগর বাজার)
৫. আমি মোঃ মোজাহারুল ইসলাম (গ্রাম- দোগাছী, নওগাঁ সদর)
এই ছবির এক কপি আমার ব্যাগে রাখি। আমাদের সাথে আরো অনেকেই ছিল তার মাঝে একজন এমতিয়াজ নামে ছিল তার বাড়ি বিরামপুর। এক্সিডেন্ট করে এক পা নষ্ট হইয়েছে এখনো আমার সাথে যোগাযোগ হয়।

আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল সাহেবের সাথে তখন আমার বাবাও ছিলেন ক্যাম্পে ক্যাম্পে শক্তি-সাহস ও প্রেরণার মন্ত্র ছড়িয়ে বেড়াতেন। গেরিলা আক্রমণ বাড়িয়ে দেয়ার জন্য কৃষক ও ছাত্রদের মধ্য থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রহ করতেন। তাদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে গড়ে তুলতেন- কার যুদ্ধ? কেন যুদ্ধ? কার সঙ্গে যুদ্ধ? এসব প্রশ্ন না জেনে কেউ গেরিলা হতে পারে না। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই ভাষণের ভেতরেই ছিল গেরিলাদের রাজনৈতিক প্রস্তুতির অভিজ্ঞা। বঙ্গবন্ধু সেদিন সবাইকে প্রস্তুত হতে বলেছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ আসলে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতই ছিল। যুদ্ধে যাওয়ার জন্য কৃষক-যুবাদের যখন ডাক এলো, তখন আর কেউ দ্বিধা করেনি।

আমি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই, আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল সাহেবকে যিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন পর আমার বাবার স্মৃতিময় রাখবার জন্য বাবাকে একটা বন্ধুক উপহার হিসাবে দিয়েছেন। তার এই সহৃদয় সহায়তা আমাকে শিকড়ের সন্ধানে অগ্রসর হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। সে জন্য আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।

জানাই আমার শুভেচ্ছা এবং কৃতজ্ঞতা তাঁর জন্য এই ইতিহাস লেখনীর মত মহৎ কাজটি হাতে নেয়ার জন্য। আশা করি, যে যুগ যুগ ধরে আমাদের আগামী প্রজন্মরা পড়ুক এবং তারা জানুক কি আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমাদের বাংলা মায়ের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিসেনারা এই দেশটি উপহার দিয়েছে তাদের। বিন্রম শ্রদ্ধা জানাই সব মুক্তিযোদ্ধাদের। (সমাপ্ত)

সান্তাহার ডটকম/১৬ জুলাই ২০২০ইং/এমএম