দৈনিক সান্তাহার

৫২ বছর ধরে হাতে তার স্টিয়ারিং

Santahar trackবাদল রায়। পেশায় ট্রাক চালক। বয়স তার ৬৭ বছর। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তিনি ট্রাকের স্টিয়ারিং ধরেন। ৫২ বছর ধরে ট্রাক চালিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করছেন। তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান সময় থেকে আজ পর্যন্ত দেশের সব জেলার আনাচে-কানাচে ট্রাক নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। তার জীবনে সবচেয়ে বড় স্বার্থকতা, এই দীর্ঘ সময়ে তার হাতে কোন দুর্ঘটনা বা প্রানহানীর ঘটনা ঘটেনি। এমনকি তার এই চালক জীবনে রাস্তায় কোন জীব-জন্তু তার গাড়িতে পরে পৃষ্ট হয়নি। প্রবীণ এই ট্রাক চালক হতে পারেন অন্য কোন ট্রাক চালকদের অনুপ্রেরণা বা অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত।

সফল এই ট্রাক চালক বাদল রায় ১৯৫০ সালে সান্তাহারের ঘোড়াঘাট এলাকায় হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কৃপার চন্দ্র রায়। ৮ ভাই-বোনের মধ্যে বাদল রায় সবার বড়। পিতা ঘোড়াগাড়ী চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সামান্য আয় রোজগার দিয়ে তার পিতার সংসার চলতো খুব কষ্টে। অভাব অনটন লেগেই থাকত। পিতার অস্বচ্ছলতার কারণে ছাত্র বাদল রায় উচ্চশিক্ষা অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে পারেননি। তাই স্কুলের গন্ডি না পেরুতেই ১০ শ্রেনীতে উর্ত্তীণ হবার পর অর্থাভাবে পড়াশোনা হয়নি। কিশোর বয়সেই রোজগারের সন্ধানে নামতে হয় তাকে। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় ভালো কোন চাকরি তার ভাগ্যে জোটেনি। পিতার সংসার যখন অভাব অনটনে জর্জরিত তখন উপায়-অন্তর না পেয়ে অবশেষে তিনি ১৯৬৮ সালে ট্রাকের হেলপারি কাজে যোগ দিয়ে পিতার অভাবের সংসারে কিছুটা সহযোগিতা করতে থাকেন। দীর্ঘ ৭ বছর এ কাজে নিয়োজিত থাকার পর তার দক্ষতা ও সততার পুরস্কার হিসেবে ১৯৭৫ সালে তিনি ট্রাক চালক হন। সে থেকে তিনি ট্রাক নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে। বর্তমান তার ৬৭ বছর বয়স। বয়সের ভারে প্রবীণ হলেও তিনি এখনো ট্রাকের স্টিয়ারিং ছাড়েননি।
তিনি বলেন, যে কোন গাড়ি চালকের ধৈর্য্য ও সর্তকতা থাকা দরকার, একটু সাবধানতা অবলম্বন করে গাড়ি চালালে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। বর্তমানে যানবাহনের ভিড়ে এবং বেপোরয়া গাড়ি চালানোর কারনে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রানহানির ঘটনা ঘটছে। এ সকল দুর্ঘটনা এড়াতে ধৈর্যের সাথে গাড়ি চালানোর জন্য তিনি সকল চালকদের প্রতি আহব্বান জানান।
বাদল রায় ৪ সন্তানের জনক। সততার সাথে ট্রাক চালিয়ে তিনি কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করলেও সন্তানদের জন্য তিনি কিছুই করতে পারেননি। তার ১ ছেলে স্থানীয় এসএমআই একাডেমীতে পিয়ন পদে চাকরি করেন, ১ ছেলে চার্জার রিকশা চালান আর এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। অর্থবিত্তের মালিক হতে না পারলেও বাদল রায় তার নীতি ও আদর্শ নিয়ে এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় সততার সঙ্গে চলতে পেরে জীবন সায়াহ্নে এসে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করেন।
>> লেখাটি সংগৃহিত (এক বছর আগের; আপডেট করা হয়নি, আমরা চেষ্টা করছি আপডেট করার)
সান্তাহার ডটকম/সান্তাহার ডটকম/২০-মে-২০১৬ইং