দৈনিক সান্তাহার

আদমদীঘিতে বাড়ছে মাছ চাষ

News Santahar 21 Mayসান্তাহার ডেস্ক:: আদমদীঘি উপজেলায় মাছ চাষ বাড়ছে। এতে একদিকে আমিষের ঘাটতি পূরণ হচ্ছে, অন্যদিকে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে উপজেলায় কয়েক হাজার মানুষ এখন ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদর ও আশপাশের গ্রামগুলোর অধিকাংশ পরিবারই এ মাছ চাষের সঙ্গে জড়িত। এরই মধ্যে উপজেলায় ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রায় ৫০-৬০টি রেণু হ্যাচারি স্থাপন করা হয়েছে। ওই সব হ্যাচারিতে উত্পাদিত রেণুপোনা সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। আবার মাছের রেণুু বিভিন্ন জলাশয়ে রেখে পোনা করে বিক্রি করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, দেশ স্বাধীনের আগে বগুড়ার আদমদীঘির মাঝিপাড়া গ্রামের মনমত চন্দ্র সরকার যমুনা নদী থেকে রেণুু ও পোনা এনে ব্যবসা শুরু করেন। সে সময় মাত্র কয়েকশ টাকা মূলধন ছিল। ১৯৮৫ সালে ব্যবসায়ী মনমত চন্দ্র সরকার প্রথম আদমদীঘিতে কৃত্রিম পদ্ধতিতে রেণু উত্পাদনের লক্ষ্যে হ্যাচারি নির্মাণ করেন। শুরু হয় মত্স্য উত্পাদনে বৈপ্লবিক সাফল্য। এরপর মনমত চন্দ্র সরকারের সহযোগিতায় আদমদীঘির তালসন গ্রামে রফি আহম্মেদ আচ্চু এবং পরবর্তীতে কাশিমালা গ্রামে বেলাল হোসেন সরদার হ্যাচারি নির্মাণ করেন। আদমদীঘির প্রথম মত্স্য ব্যবসায়ী মনমত সরকার ব্যবসা শুরুর কিছুদিন পর মারা গেলে অপর দুই ব্যবসায়ী রফি আহম্মেদ আচ্চু ও বেলাল হোসেন সরদার এখন পর্যন্ত মাছের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের দেখে উত্সাহিত হয়ে অনেকেই এখন মাছ চাষ ও রেণুপোনার ব্যবসা করে সফল হয়েছেন।
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা মত্স্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি পুকুর বা জলাশয়ের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজার। ছোট বড় মিলিয়ে হ্যাচারি রয়েছে ৬০টিরও বেশি। পুকুরে পোনা চাষ এবং হ্যাচারিতে কৃত্রিমভাবে ডিম থেকে রেণু উত্পাদন করা হয়। হ্যাচারি থেকে পাঁচ-ছয়দিনের রেণুু উত্পাদন হয় পাঁচ থেকে ছয় হাজার কেজি। সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার জলাশয়ে পাঁচ-ছয়দিনের রেণুু থেকে এক মাসের পোনা উত্পাদন হয় প্রায় পাঁচ হাজার টন। জলাশয়গুলোয় উত্পাদিত রেণু থেকে পোনা বিক্রি করা হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাছচাষীদের কাছে। পুঁটি, কাতলা, দেশী শিং, মাগুড়, পাবদা, তেলাপিয়া, রুই, পাঙ্গাস, কার্প, কমন কার্প, মৃগেল মাছের পোনা জাত ও মান ভিত্তিতে ১০০ থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। পোনা বিক্রির জন্য আদমদীঘি উপজেলা সদরের পাবলিক লাইব্রেরিসংলগ্ন মাঠে বাজার তৈরি হয়েছে। এ বাজার বসে প্রতিদিন ভোর থেকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পোনা বিক্রির হাটও শেষ হয়ে যায়। দিনাজপুর, রংপুর, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, সিলেটসহ ঢাকার আশপাশের বেশকিছু অঞ্চলের মাছচাষীরা এ বাজার থেকে পোনা সংগ্রহ করেন।
আদমদীঘি উপজেলার মাছ ব্যবসায়ী মো. আলতাফ জানান, মাছ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হওয়ার পর থেকে তার দিন বদলে গেছে। খামারে উত্পাদিত পোনা ও মাছ বিক্রি করেই তিনি দিনে প্রায় হাজার টাকা আয় করেন।
জয়পুরহাট থেকে পোনা নিতে আসা মো. সাইফুল জানান, বগুড়ার পোনাগুলো পুকুরের আবহাওয়ার সঙ্গে দ্রুত মানাতে পারে। যে কারণে এ পোনা চাষে দ্রুত সাফল্য পাওয়া যায়।
আদমদীঘি এলাকার মাছচাষীরা জানান, বগুড়ায় উত্পাদিত মাছের পোনা সাধারণত দ্রুত বাড়ে। নতুন পুকুরে চাষাবাদ করা হলেও পানির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে।
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা ক্ষুদ্র মত্স্য ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা জানান, প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত মাছের পোনা বেচাকেনার বাজার বসে। বাজারে প্রতিদিন প্রায় ১৪-১৫ লাখ টাকার পোনা মাছ কেনাবেচা হয়। রেণু ও পোনার পাশাপাশি বড় মাছও বিক্রি হয়ে থাকে। এ পোনা মাছ বাজারে প্রায় সারা বছর বেচাকেনা হলেও মূলত মার্চের প্রথম থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পুরোদমে জমজমাট থাকে।
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা ক্ষুদ্র মত্স্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, পোনা মাছ বাজারে প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বেচাকেনা হয়। আর এ বাজারে প্রতিদিন প্রায় ১৪-১৫ লাখ টাকার কেনাবেচা হয়। এ উপজেলার প্রায় ৮০ শতাংশ লোকই মত্স্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। উপজেলার হ্যাচারি থেকে রেণু ও পোনা দেশের বিভিন্ন জেলার মাছচাষীদের কাছে বিক্রি করে ভালো আয় করছে বগুড়ার মাছচাষীরা।

>> সান্তাহার ডটকম/ইএন/২১ মে ২০১৭ইং