দৈনিক সান্তাহার

কেউ তাকে দেখতে যাইনি খবরও নেয়নি

সাজেদুল ইসলাম চম্পা :: খুব সম্ভবতঃ ১৯৮৪/৮৫ সালের সময় থেকে তাকে আমি চিনি। আমি তখন সান্তাহার কলেজ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক। পার্টি অফিস বলতে তখন এই উপজেলায় একটাই অফিস। সাবেক এমপি গভর্নর কসিম ভাইয়ের বাসার নিচতলা। সর্বমোট ১০/১৫ জন মানুষ তখন আওয়ামী লীগ অফিসে আসা যাওয়া করতো। দিনে এ সংখ্যা আরো কমে যেতো। কেউ যদি দেখে ফেলে তাহলে আবার হামলা মামলার ভয়ে। মিছিলে সর্বোচ্চ ১০/১৫ জন। যেদিন ২০/২৫ হতো সে কি আনন্দ। রেগুলার দুটো মানুষ জোড়া মানিক আজমল ভাই আর আলতাফ ভাই। কসিম ভাইয়ের বাসার পাশে রঘুর দোকানের লাল চা। গোলাম মোরশেদ ভাই, আনছার ভাই। অসম্ভব আশাবাদী মানুষ ঢাকাইয়া হক ভাই। বেঞ্জুরুল ভাই কাজল ভাইয়েরা চলে যাবার পরে কামাল, আসলাম, রবীন, রতনদা রতন কাকা, মতিন ভাইয়েরা। ইয়ার্ড কলোনি, ছাতনি আর দমদমার কিছু ছাত্রলীগ। ঢাকা টেইলার্সের জয়নাল চাচা, আমজাদ চাচা, বক্কার ফকির (খন্দকার) বঙ্গবন্ধু যাকে মুন্সি বলে ডাকতেন, শের আলী। ঢাকাইয়া কিছু পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগ। আর আমি সর্ব কনিষ্ঠ ছাত্রলীগ।

সে সময় একজন ছেলেকে প্রায়ই অফিসে আসতে দেখতাম। ও বসতো সাধারনতঃ পিওন রা একধরনের গোল টুলে বসতো সে সময়ে, সে রকম একটা টুল ছিল পার্টি অফিসে। ও বসতো ওই টুলে। পার্টি অফিস ঝাড়ু দিতো। কসিম ভাই পান খাবে, মোরশেদ ভাই আটআনার গুল আনতে বলবে। আজমল ভাইয়ের ষ্টাইল করে সিগারেট খাবে সেটা কে আসবে, সেটাও ওই হাফপ্যান্ট পরা একটু চোখ ট্যারা ছেলেটি। বেশ কয়েকদিন পরে কাকে যেনো বললাম, কে এটা। উত্তর পেলাম, ও ঢাকা পট্টির বিশিষ্ট কাপড় ব্যবসায়ী হক সিকদারের ছেলে #আসলাম #সিকদার। তারপরে অনেক ইতিহাস। এরশাদ খালেদার পেটোয়া বাহিনী। ৯০ গনঅভ্যুত্থান, মিছিল মিটিং পিকেটিং। তারপরে একটু বড় হবার পরে শুরু হলো ম্যারাথন বক্তৃতা দেবার অভ্যাস। যেদিন আমাদের প্রতিবাদ বা জনসভা বা স্মরনসভা বা যে কোনো আওয়ামী সমাবেশ শুরু হবার আগে ওর বক্তব্য শুরু হতো ১২টার দিক থেকে। আমরা যেতাম তিনটার দিকে বা সাড়ে তিনটার দিকে। ততক্ষণ চলতো আসলাম সিকদারের ম্যারাথন বক্তৃতা। এটাই তার কাল হয়েছিল। ২০০১ সালে বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় আসার পরে খোকা এমপি তাকে মিথ্যা হত্যা মামলায় হাজতে পাঠায়। হাজতে থাকাকালীন সময়ে তার বাবার মৃত্যু হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য সে তার বাবার কবরে একমুঠো মাটি দিতে আসে প্যারোলে ডান্ডাবেড়ি পায়ে দিয়ে।

অনেক দুঃখ কষ্ট চড়াই উৎরাই পার হওয়া আওয়ামী লীগের এই নিবেদিত প্রাণ মানুষটি আজ অসুস্থ হয়ে বিছানাগত। কেউ তাকে আমরা দেখতে যাইনি খবরও নেইনি। কারণ আসলামের কাছে কোনো সরাকারি পুকুরের টেন্ডার নেই, ধান ঢোকানোর স্লিপ নেই, স্কুল কলেজের নিয়োগ নেই, চাল গম কোনো কিছু নেই। এখন তার কাছে যেয়ে আর আমাদের কোনো কাজ নেই। তারপরে একদিন হঠাৎ আসলামেরা চলে গেলে তার জানাযায় দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল নয়নে বড় বড় বক্তৃতা করব। তারপরে পার্টি অফিসের সামনে একটা ব্যানার, পার্টি অফিসে হয়তো একটা স্মরণসভা। সে স্মরণসভায় হাইব্রিডদের ভুলভাল বক্তৃতা। চকচকে কালো কড়া ইস্ত্রি করা মুজিবকোর্টের ছড়াছড়ি। বেনসন এন্ড হেজেজের তীব্র ঘ্রান আসলামের মিলাদের আগরবাতির গন্ধকে ম্লান করে দিবে। একসময় আসলামরা হারিয়ে যাবে কালের গভীরে। নতুন প্রজন্মের ইতিহাস না জানা কর্মিরা বিশ্রী কর্কশ ভাবে স্লোগান দিবে, শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই….।

সান্তাহার ডটকম/১৭ জুন ২০২০ইং/এমএম